“আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক…”

আবার এক নক্ষত্রপতন। চলে গেলেন চিরস্মরণীয় কবি শঙ্খ ঘোষ। বহুদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন কিন্তু করোনার ছোবল তাঁকে কেড়ে নিল। গতকাল রাত থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং সকলকে স্তব্ধ করে আজ সকাল এগারোটা নাগাদ তাঁর নিজগৃহে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মাসের শুরু থেকেই এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করেছিল ভারতবাসীকে। করোনার আক্রমণ থেকে বাদ গেলেন না পঞ্চ পাণ্ডবের এই শেষ পাণ্ডবও। জ্বরের কারণে গত সপ্তাহে তাঁর কোভিড পরীক্ষা করানো হয় এবং ১৪ই এপ্রিল তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। বাড়িতেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। এর আগে বছরের শুরুতেও তিনি বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু এইবার শরীর আর সায় দিল না। জীবনানন্দ পরবর্তী এক কবিযুগের অবসান ঘটলো তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে।

কবি বাংলা সাহিত্যে তাঁর স্নাতকস্তরের পড়াশুনো শেষ করেন ১৯৫১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এবং স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশুনো শেষ করেন ১৯৫৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনি অধ্যাপনাও করেছেন। যাদবপুর, বিশ্বভারতী ছাড়াও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও তিনি অধ্যাপনার সূত্রে যুক্ত ছিলেন। পাঠকসমাজকে উপহার দিয়েছেন একের পর এক উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘বাবরের প্রার্থনা’, ‘মূর্খ বড় সামাজিক নয়’ , ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’, ‘দিনগুলি রাতগুলি’। ‘বাবরের প্রার্থনা’র জন্য তিনি ১৯৭৭ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১১ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ ও ২০১৬ সালে জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে সম্মানিত করেন। বিভিন্ন সময়ে কবিকে সরব হয়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের দ্বারা আহত হয়ে বার বার বিরোধিতা ও প্রতিবাদ করতে দেখা গিয়েছে।


কবির শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে আজ নিমতলা মহাশ্মশানে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তোপধ্বনিকে বিরত রেখে তাঁকে শেষ বিদায় জানানো হবে আজ। তাঁর শূন্যতা কবিজগতের জন্য, বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের পক্ষে মেনে নেওয়া “সহজ নয়”।

“এ কথা খুব সহজ, কিন্তু কে না জানে

সহজ কথা ঠিক ততটা সহজ নয় ।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *