গণতন্ত্রের উল্লাসে মেতে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু, এর মাঝে চাঞ্চল্যকর তথ্য এটাই যে লাফিয়ে লাফিয়ে কোভিড সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়াল তিন লক্ষ। এরই মাঝে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দক্ষিণ দিনাজপুরে জনসভায় ঘোষণা করেন কোভিডের টিকা মিলবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
মুখ্যমন্ত্রী আগেও টিকা কেনার দাবি জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারকে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার বার বার তা নাকচ করে দেয়। তার মতে এই মুহূর্তে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার কেন্দ্র নিজের দায় এড়িয়ে যেতে চাইছে। প্রতিষেধক মিলছে না। যারা প্রথম ডোজের টিকার পরে দ্বিতীয় ডোজের জন্য যাচ্ছেন, অধিকাংশ ফিরে এসেছেন। এখন প্রথম ডোজের জন্যেও প্রতিষেধক জোগাড় করা অত্যন্ত সমস্যার। এই দায় এড়াতেই কেন্দ্রীয় সরকার খোলাবাজারে তা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শুধু তাই নয়, অভিযোগ উঠেছে টিকার ভিন্ন দাম নিয়েও। এই সঙ্কটজনক অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার এই সিদ্ধান্ত নিলেও মানুষকে এত বেশি দাম দিয়ে তা খোলাবাজার থেকে কিনতে হবে। কেন্দ্র যা কিনছে ১৫০ টাকায়, রাজ্য ও বেসরকারি হাসপাতালকে তা কিনতে হচ্ছে যথাক্রমে ৪০০ এবং ৬০০ টাকায়। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মতে কেন্দ্র এই বিষয় নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন রাজ্যে ৫ই মে থেকে বিনামূল্যে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সকলকে টিকাকরণের কাজ শুরু হবে। রাজ্যে ভোটের পরিস্থিতি ও করোনা একসাথে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। তাই, ২ মে নির্বাচনের ফলাফলের কাজ শেষ হওয়ার পরই এই কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও নির্বাচনের কাজের সঙ্গে যেহেতু বহু মানুষ যুক্ত, সেহেতু ‘ম্যানপাওয়ার’ কম, তাই এই সিদ্ধান্ত। টিকাকরণের জন্য মানুষের সুবিধার্থে ক্যাম্প করার নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয়া। রাজ্যের যেই জায়গায় অতিমারির প্রকোপ সবচেয়ে বেশি, সেই জায়গাগুলি থেকেই শুরু হবে টিকাকরণ।
কিন্তু, আদতে কি এটিও একটি রাজনৈতিক চাল নয়? নির্বাচনের ফলাফলের পর নতুন সরকার তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে রাজ্য। তখন যে সরকার আসবে তার উপর দায়ভার পড়বে এই টিকাকরণের। তার মানে কি নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতেই মানুষের কপালে একমাত্র বিনামূল্যে মিলতে চলেছে এই টিকা? এই নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। বিনামূল্যে এই টিকার বন্টন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই মহামারীর থেকে বাঁচতে এই ন্যূনতম ব্যবস্থা প্রতি নাগরিকের অধিকার। ভবিষ্যতের সিদ্ধান্তই বলে দেবে আদতে কোন উন্নয়ন রাজনৈতিক চাল ও কোনটা মানুষের সৎ উন্নতির জন্য।