আঠেরো ঊর্ধ্ব সকলের জন্য আগামী মাসের পয়লা তারিখ থেকে খোলা বাজারে টিকা বন্টনের সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় সরকার। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে করোনার দৈনিক সংক্রমণ যে গতিতে বেড়ে চলেছে, তা এপ্রিল মাসে ধরা ছোঁয়ার ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। রাজ্যে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার বিরোধী দলদের অভিযোগ কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি এখন শুধুই ভোট।
তাই টিকা বন্টন, বা করোনা পরিস্থিতিকে সামাল দেওয়ার পরিবর্তে প্রচার, রোড-শোকে প্রাধান্য দিয়েছে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার দুই-ই। সরকার থেকে ছাড়পত্র না পেলে খোলা বাজারে বিক্রি করা সম্ভব নয় এই টিকা। তাই কেন্দ্রীয় সরকার দেশে দৈনিক সংক্রমণ দিনে দু’লক্ষ ছাপিয়ে যাওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেয়। দেশের রাজ্যগুলি এখন সরাসরি প্রতিষেধক উৎপাদনকারী সংস্থা থেকে প্রতিষেধক টিকা ক্রয় করতে পারবে। প্রতিষেধক উৎপাদনকারীরাও উৎপাদনের পঞ্চাশ শতাংশ বিক্রি করতে পারবে রাজ্যগুলিকে। তবে ফ্রন্টলাইন কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, এবং ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বের নাগরিকদের এখনও প্রতিষেধকের ভার কেন্দ্রের উপরেই।
দেশে প্রতি মাসে যত টিকার প্রয়োজন তার ষাট শতাংশ উৎপাদনে ও সরবরাহে সক্ষম হচ্ছে উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি। ফলে, চাহিদার থেকে অনেকটাই কম মিলছে এই টিকা। এছাড়াও বয়সের ভিত্তিতে যে টিকাকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাতে টিকাকরণ প্রক্রিয়ায় অনেকটা সময় লেগে যাচ্ছে। করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউতে অল্পবয়সীদের মধ্যেও এই মারণ ভাইরাসের থাবা পড়তে দেখা গেছে। বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউন, নাইট কার্ফু জারি হতে দেখা গেছে। পশ্চিমবঙ্গে এই উত্তপ্ত নির্বাচনের আবহাওয়ায় লকডাউন বা কার্ফুর কারণে নির্বাচনের যে সমস্যা হতে পারে তাকে প্রাধান্য দিয়ে মানুষের স্বাস্থ্যের প্রতি অতি অসচেতন হয়েছে দুই সরকার। ফলত রাজ্যের হাসপাতালগুলির বেহাল অবস্থা। মিলছেনা বেড। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক চালের মতোই ব্যবহার করা হয়েছে এই টিকাকে। তবে বাজারদরের অনুযায়ী এই প্রতিষেধক কিনতে হবে।
এর থেকেও বড় প্রশ্ন, যে মানুষগুলোকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যে কেন্দ্রগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে প্রতিষেধকের অভাবের কারণে, এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এই সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত? সংস্থাগুলো কীভাবে জোগান দেবে এত টিকার? তা নিয়ে এখনও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তবে আশ্বস্ত করা গেছে যে প্রতিষেধক উৎপাদন বাড়ানো হবে, যার জন্য আর্থিক সাহায্য করবে কেন্দ্রীয় সরকার। বাইরের দুটি দেশের সংস্থা উৎপাদন বাড়ানোর আশ্বাসও দিয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষা মে দিবসের।