রাবণের চিতা

কথায় বলে ‘রাবণের চিতা’, যে চিতার আগুন কখনো নেভে না। মানুষ হয়তো এর আগে কখনো এই দিন দেখবে বলে কল্পনা করেনি, কিন্তু মানুষের বেপরোয়া ভাব মানুষকে এই অতিকল্পিত দৃশ্যের সম্মুখীন করেছে গত কয়েকদিনে। প্রতিদিন দেশে করোনা আক্রান্তের রেকর্ড যেভাবে ভাঙছিল, তাতেও মানুষকে সচেতন করা যায়নি। গতকাল ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা তিন লক্ষ ছাড়ায়। আক্রান্তের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তাতে মৃতের সংখ্যাও সেই অনুপাতে বেড়ে চলেছে।
মানুষকে আগের বছর যেভাবে ধরে বেঁধে লকডাউন, নাইট কার্ফুর অধীনে ঘরে থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল, ইতিমধ্যে তা থেকে বোঝা গেছে যে মানুষ নির্বিকারভাবে যেভাবে রাস্তায় নেমে পড়ছেন, বিনা মাস্ক, বিনা সতর্কতায়, সেখানে দেশে লকডাউন ছাড়া অন্য উপায় নেই। কিন্তু গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে যে ভাষণ রাখেন তাতে তিনি বার বার অনুরোধ করেন যাতে এমন পরিস্থিতি তৈরি না করা হয় যাতে আবার লকডাউন করতে বাধ্য হয় সরকার। কিন্তু মানুষের মান থাকলেও হুঁশের অভাব ঘটেছে। ভারতের বহু মানুষ নির্ভর করে তাদের দৈনিক উপার্জনের উপর। সেখানে দাঁড়িয়ে তাদের বক্তব্য তাদের কাছে মৃত্যুর দুই রাস্তা এখন উপস্থিত। হয় তাদের না খেতে পেয়ে মরতে হবে, নাহলে করোনার। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে অত্যাবশ্যক পণ্যের জন্য দোকান বাজার কিছুক্ষণ খোলা রাখা এবং দিনের কিছুটা সময় লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কিনা তার দিকে চেয়ে আছে ভারতবাসী। অর্থনীতির ধাক্কা দ্বিতীয়বারের জন্য সামলে উঠতে পারবে না ভারত, কিন্তু তার বদলে কুরবানি দিতে হচ্ছে মানুষের প্রাণ।
বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে যেভাবে বিভিন্ন কবরস্থান থেকে কবর খুঁড়ে নতুন কবরের জন্য জায়গা করা হচ্ছে, সেভাবেই গাজিয়াবাদের হিন্দনঘাট শ্মশানে শেষকৃত্যের অপেক্ষা করছে সারিবদ্ধ মৃতদেহ। বেনারসের মনিকর্ণিকার ঘাটের চিতার আগুন নিভছে না। কানপুর, ভোপাল, দিল্লি, মহারাষ্ট্রে চলছে মৃত্যুমিছিল। মানুষ যেন মানবিকতার বিলাসিতাকে পুড়িয়ে চলেছে এই চিতার আগুনে। সাবধান হওয়া প্রয়োজন। ঘরে থাকা প্রয়োজন। মাস্ক পরা প্রয়োজন। নাহলে আপনিও নাম লেখাতে বাধ্য হবেন এই  অতিমারির অংশ হিসেবে। পরের শীতে গা গরম করবেন নাকি চিতার আগুনে ভস্মীভূত হবেন, তা পাঠকের ইচ্ছা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *